The Life and Legend of India's Bandit Queen
প্রতিবাদী এক দস্যুরানী ফুলনদেবী !___________
'ফুলন দেবী'। নামটার সাথে আমরা মোটামুটি সবাই কম বেশি পরিচিত। মারকুটে, দস্যি কোনো মেয়ে দেখলেই আমরা তাকে ফুলন দেবী আখ্যা দিয়ে বসি। কিন্তু আমারা কতটুকু জানি ফুলন দেবীর সম্পর্কে?
ফুলনদেবী |
ফুলন দেবী ছিলেন তৎকালীন ভারতের আলোচিত এক ডাকাত। যার পরিচিতি ছিল 'দস্যু রানী' হিসেবে। তবে অনেকে তাকে মায়ারানী বলেও ডাকতেন। কেননা দরিদ্র ও শোষিত মানুষদের প্রতিতার ছিল অগাধ ভালোবাসা। ১৯৬৩ সালে ভারতের নিম্নবিত্ত এক পরিবারে জন্ম নেন ফুলন। ছোটবেলা থেকেই জীবনযুদ্ধ করে বড় হতে হয়েছে ফুলনকে। বাস্তবতা কতটা নিষ্ঠুর, কতোটা নির্মম তা হাড়েই হাড়েই টের পেয়েছেন তিনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আর অবহেলা অবজ্ঞায় বড় হওয়া ফুলন একসময় হয়ে উঠে প্রতিবাদী এক ভয়াবহ দস্যু। লাঞ্চিত-বঞ্চিত আর প্রতিশোধের তাড়নায় উন্মাদ ফুলন একের পর এক মানুষ হত্যা করে পরিচিতি পায় ইতিহাসের এক ভয়ংকর প্রতিবাদী নারী হিসেবে। মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবার বয়সী এক লোকের সঙ্গে বিয়ে হয় ফুলন দেবীর। আর তখন থেকেই জীবনযুদ্ধে নামতে হয় তাকে। সে সময়ে ফুলনের গ্রাম এবং আশেপাশের একাধিক গ্রামে ঠাকুর বংশের জমিদারেরা দরিদ্র গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফসল নিয়ে নিত এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালাত। যা সহ্য করার মতো নারী ছিলেন না ফুলন। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি দখলকারীদের নেতা মায়াদীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আর এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঠাকুরেরা বেমাই নামে প্রত্যন্ত এক গ্রামে তাকে ধরে নিয়ে যায় । এরপর তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। ঠাকুর ও তার লোকেরা দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে ফুলনকে গণধর্ষণ করে। প্রতি রাতেই ফুলনের জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত চলতে থাকতো এ পৈশাচিকতা। ১৬ দিনের মাথায় এক রাতে নির্যাতন শেষে তারা ফুলনকে মৃত মনে করে ফেলে রাখেন। আর প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী ফুলন এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। তখন ফুলনের বয়স ছিল মাত্র ১৭। পালিয়েও যেন রক্ষা হলো না ফুলনের। এবার তিনি ধরা পড়লেন এক দস্যু দলের হাতে। দস্যুদের নেতা বাবুর নজর পড়ে ফুলনের ওপর। সে ফুলনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলে আরেক দস্যু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাবুকে খুন করে ফুলনকে রক্ষা করেন ডাকাত বিক্রম। এরপর তারা দুজন বিবাহবদ্ধে আবদ্ধ হন। আর এখানেই শুরু হয় ফুলনের নতুন জীবন। বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্রের ব্যবহার ও রাইফেল চালানো শিখে ফুলন দেবী রূপান্তরিত হন দস্যুরানী হিসেবে। ফুলন তার বাহিনী নিয়ে প্রথম হামলা চালায় তার সাবেক স্বামীর গ্রামে। নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে তার স্বামীকে খুন করে রাস্তায় ফেলে রাখেন। নিজের সংগঠিত দস্যু দল নিয়ে ক্রমাগত জমিদারবাড়ি এবং ধনী গ্রাম গুলোতে আক্রমণ চালাতে থাকেন। এর মধ্যেই একদিন ধনী ঠাকুর বংশের ছেলের বিয়েতে সদলবলে ডাকাতি করতে যান ফুলন। সেখানে ফুলন খুঁজে পান এমন দুজন মানুষকে, যারা তাকে ধর্ষণ করেছিল। ক্রোধে ফুলন দেবী আদেশ করেন বাকি ধর্ষণকারীদেরও ধরে আনার। কিন্তু বাকিদের পাওয়া না যাওয়ায় ঠাকুর বংশের ২২ জনকে এক সঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হয়। বেমাইয়ের এই গণহত্যা ভারতবর্ষে ব্যাপক সাড়া ফেললে ফুলনকে ধরার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে ওঠে তৎকালীন সরকার। আবার ফুলনের পক্ষেও আন্দোলন হয় তখন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকার সন্ধিপ্রস্তাব করলে ফুলন অনেকগুলো শর্ত দেন। সরকার সেই শর্ত মেনে নিলে ১০ হাজার মানুষ আর ৩০০ পুলিশের সামনে ফুলন দেবী অস্ত্র জমা দেন গান্ধী আর দুর্গার ছবির সামনে। এগারো বছর কারাভোগের পর ফুলন যোগ দেন ভারতের সমাজবাদী পার্টিতে এবং ১৯৯৬ এবং ৯৯-তে পরপর দুইবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
বছর কয়েক গড়াতেই ২০০১ সালের ২৫ জুলাই গুলিতে নিহত হন ফুলন দেবী।
Post a Comment