জীতু সাঁওতাল জীতু সাঁওতাল জীতু সাঁওতাল
।।মালদহের সেই আদিনা মসজিদ আজও সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসে উজ্জ্বল সাক্ষী ।।
মালদহের সেই আদিনা মসজিদ |
1927 মালদহের বরেন্দ্রভূমিতে প্রবল উত্তেজনা...........
ভারতে ইংরেজ সাম্রাজ্যের অত্যাচারের প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী ছিলেন কৃষক ও অরণ্যবাসী সমাজ।ইংরেজ প্রবর্তিত ভূমি রাজস্বের নতুন ব্যবস্থা সর্বনাশ ডেকে এনেছিল কৃষক ও বনবাসী সমাজের।তাই দিকে দিকে ইংরেজ শাসনের প্রত্যক্ষভাবে প্রতিবাদ করে গণ-আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন জিতু সাঁওতাল।
ইংরেজ ও সুদখোর মহাজন ও জমিদার সবাই মিলে অমানুষিক শোষণ অত্যাচার শুরু করে। এই অত্যাচার সাঁওতালদের পক্ষে অসহ্য ছিল, তাই তারা তাদের অভাব মেটানোর জন্য জমিদারের কাছে সামান্য কিছু চাল ,ধুতি, শাড়ি , শীতের একটা কম্বল এর বিনিময়ে সাঁওতাল চাষীদের কাছ থেকে জমিদাররা লিখে নিয়েছিল হাজার হাজার একর জমি।
এই প্রসঙ্গে জমিদাররা যখন সাঁওতাল দের কাছ থেকে শস্য নিতেন তখন স্বাভাবিক ওজনের চাইতে ভারী ছিল বাটখারা, একে বলা হতো "বড় বউ বা কেনারাম"
আর জমিদার যখন সাঁওতালদের শস্য দিতেন তখন থাকতো স্বাভাবিক ওজনের চাইতে কম ওজনের বাটখারা। একে বলা হতো "বেচারাম বা ছোট বউ " ।
সাঁওতাল সমাজ সহজেই বুঝতে পারলো তাদের মূল্ লড়াই লড়তে হবে ইংরেজদের সাথে। সমস্ত অত্যাচারের প্রশ্রয়দাতা এই ইংরেজ সরকার। আর এখন থেকে জিতু সাঁওতালের রাজত্বের সূচনা পর্ব শুরু হয়েছে— এই পর্ব স্বাধীন ভারতের পর্ব। “A rumour circulated all over the Barind that 'Jitu's Raj' was to be in augurated in early spring this year. Adhiars were advised to delay the payment of Adhi share as the com ing settlement operation was ex pected to confer share croppers' Right to the land they till as their own jot holdinp."
এই জমিদাররা ইংরেজদের সহযোগিতায় সাঁওতাল চাষীদের জমি গ্রাস করতে লাগলো। এই অবস্থায় জিতু সাঁওতাল বামনগোলা, গাজোলগোলা ও বিভিন্ন এলাকার ধানের গোলা লুট করতে শুরু করলেন। এসব দেখে জমিদারদের চোখের ঘুম কেড়ে যায় এবং তারা ইংরেজদের কাছে নালিশ জানায়।
এদিকে ধীরে ধীরে হাজার হাজার সাঁওতাল জিতুর নেতৃত্বে সাড়া দিতে থাকেন। জিতুর কার্যকলাপ ইংরেজদের অষ্ট ব্যস্ত করে তোলে। জিতুর এই গণবিদ্রোহের জন্য একটি দুর্গ বা স্থায়ী সুরক্ষিত জায়গা প্রয়োজন ছিলো। 1932 সালের দিকে জিতু তার বিশাল সংখ্যক সাঁওতাল মিছিল নিয়ে আদিনা মসজিদে প্রবেশ করেন। আর আদিনা মসজিদ কে গড়ে তোলা হয় দূর্গের মতো। এখনে লোকেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। জিতুর নেতৃত্বে বিশাল সাঁওতাল বাহিনী আদিনা মসজিদ কে দুর্গ রূপে রূপান্তরিত করলো। এই যুদ্ধকে সাঁওতালরা স্বাধীনতা যুদ্ধ মনে করে , জিতু সরদারের আদেশে নানা জায়গায় মহাজনদের গোলা লুট শুরু হয়।
ধীরে ধীরে খবর অনেক বড় আকার ধারণ করে। জমিদারদের নালিশে জিতুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আদেশ জারি হয়। ঘিরে ফেলা হয় আদিনা মসজিদ কে। সঙ্গে জমিদাররা নিজেদের বন্ধুক নিয়ে আদিনা মসজিদে চলে আসে। জিতুকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিলে, জিতু তাদের কথা না শোনায় তারা চারদিক থেকে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এদিকে জিতুর আদেশে তীর ধনুক শাবল ও নানা রকম অস্ত্রের দ্বারা আক্রমণ করতে থাকে। কিন্তু আধুনিক অস্ত্রের কাছে এই যুদ্ধ বেশিক্ষণ চলতে পারে নি।স্বাধীনতা সংগ্রামের আহত এই যোদ্ধাদের টেনে হিঁচড়ে বের করা হয় দুর্গ থেকে। আহত অবস্থায় জিতুকে গুলি করা হয়, এই গুলি,পুলিশের গুলিতে জিতুর মৃত্যু হয়নি। তাহলে এই গুলি করলো কে ??
জিতুর হত্যাকান্ডের রিপোর্ট পরিকল্পিতভাবে চেপে দেওয়ার চেষ্টা হয় আহত অবস্থায় ধরা সত্ত্বেও জিতু কে হত্যা করা হলো কেন তা আজও অনেকের অজানা।
Bengal Legislative council, Forty - First Session, 28, Feb, 1933, confidential Proceedings, Official Report-এ পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। এঁরা ছিলেন—
(১) জিতু সাঁওতাল,
(২) বারকা সাঁওতাল,
(৩) জেখা সাঁওতাল।
অন্য দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত হন—
(১) ছোটকা সাঁওতাল,
(২) মানো সাঁওতাল,
(৩) কাচু সাঁওতাল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিহত ও আহত হয়েছিল অনেক বেশি।
আদিনা মসজিদের শক্ত নিরেট প্রস্তর প্রাচীরে ইংরেজ পুলিশের ছোড়া বারুদ আর গোলার ক্ষতচিহ্ন আজও মুছে যায়নি— জ্বলজ্বলে দাগ আজও যেন জিতুর গৌরবের স্মৃতিতে পরিস্ফুট হয়ে আছে।
তথ্য সূত্র ঃ-
নানা ধরনের পত্রিকা
Post a Comment